এবিসি নিউজ
টঙ্গী, গাজীপুর
গাজীপুরের টঙ্গীর মোক্তারবাড়ি এলাকার একটি বাড়িতে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) গোপন আস্তানার সন্ধান পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
র্যাব জানায়, ওই ফ্ল্যাটে জেএমবির জঙ্গি প্রশিক্ষণ চলত। আজ বৃহস্পতিবার ভোররাতে মোক্তারবাড়ির ৪৪ নম্বর আউচপাড়ার ছয়তলা বাড়ির চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে মাহমুদুল হাসান, আশিকুর আকবর আবেশ, নাজমুস সাকিব ও শরীয়তউল্লাহ নামের চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেখান থেকে একটি পিস্তল, ১৩৩টি গুলি, তিনটি চাকু, তিনটি ছুরি, দুটি কুড়াল, একটি চাপাতি, সাতটি ককটেল, ১৩টি ইলেকট্রিক ডেটোনেটর, সাতটি পাওয়ার জেলসহ বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক, বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম ও বেশ কিছু জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়।
র্যাব জানায়, ওই ফ্ল্যাটে প্রশিক্ষণ দিতেন মাহমুদুল হাসান, যিনি জেএমবির দক্ষিণাঞ্চলের আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ঘটনাস্থলে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, বোমা তৈরিতে পারদর্শী মাহমুদুল। তাঁর গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলায়। তিনি ২০০৪ সালে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় জেএমবিতে যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। মাহমুদুল রাজধানীর মিরপুরসহ জেএমবির বিভিন্ন প্রশিক্ষণকেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দিতেন। প্রতিটি কেন্দ্রে ৮ থেকে ১০ জনের একটি দল করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। সবশেষে টঙ্গীর এই বাড়িতে আসেন তিনি। এসআই ইব্রাহিম হত্যা ও হোসনি দালানে বোমা হামলায় যারা সম্পৃক্ত ছিল, তারা মাহমুদুলের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।
গ্রেপ্তার হওয়া অন্য তিনজনের মধ্যে আটক আশিকুর রহমান রংপুরের প্রাইম মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। নাজমুস সাকিব মাদ্রাসা থেকে পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ঢাকা এসেছিলেন। এ ছাড়া শরিয়তউল্লাহ যশোরের এমএম কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র বলে জানান এই র্যাব কর্মকর্তা।
টঙ্গীর আস্তানা থেকে দলটির আরও নাশকতার পরিকল্পনা ছিল জানিয়ে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, রাজধানী থেকে সরে এসে জেএমবি সদস্যরা ঢাকার আশপাশের এলাকায় প্রশিক্ষণকেন্দ্র গড়ে তুলছেন।
আউচপাড়ার ওই ফ্ল্যাট এ মাসের প্রথম দিকে ভাড়া নেন মাহমুদুল। দুই হাজার টাকা অগ্রিমও দেন। বাড়িওয়ালা পরিচয়পত্র চাইলে পরে দেবেন বলে জানান তিনি। এরপর ১৪ জুলাই বাসায় ওঠেন মাহমুদুল।
জানা গেছে, ৪৪ নম্বর বাড়ির মালিক জেসমিন আক্তার। ছয়তলার ওই বাড়ি তত্ত্বাবধান করেন তাঁর মেয়ের স্বামী শরীফুল ইসলাম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ৫ জুলাই মাহমুদুল মার্চেন্ডাইজার পরিচয় দিয়ে বাড়ির চারতলার ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন। দুই হাজার টাকা অগ্রিম দেন তিনি। ঈদের পরে স্ত্রী ও ছোট ভাইকে নিয়ে ফ্ল্যাটে উঠবেন তিনি। পরিচয়পত্র পরে দেবেন বলে জানিয়ে চলে যান মাহমুদুল। ১৪ জুলাই ফ্ল্যাটে ওঠেন। এরপর রং করার জন্য চাবি চাওয়া হলেও মাহমুদুল তা মালিককে দেননি।
শরীফুল ইসলামের ধারণা, তাঁদের বাড়ির প্রহরী কয়েক দিন ধরে ছুটিতে থাকার সুযোগে বোমা, গুলি ও অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম ফ্ল্যাটের ভেতর নিতে পারেন মাহমুদুল।