শুক্রবার, ১ জুলাই, ২০১৬

সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে পাচার হচ্ছে গাছ : বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশের অভিযোগ



স্টাফ রিপোর্টার

কালিয়াকৈরে বিভিন্ন সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে একটি চক্র চুরি করে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এ চক্রের সঙ্গে রঘুনাথপুর বিটের অসাধু বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বন বিভাগ সূত্র জানায়, কালিয়াকৈরে প্রায় সাড়ে ২১ হাজার একরের বেশি বন রয়েছে। এসব বনকে কালিয়াকৈর ও কাচিঘাটা দুটি রেঞ্জে ভাগ করা হয়েছে। দুটি রেঞ্জের আওতায় রয়েছে বোয়ালী, রঘুনাথপুর, খলশাজানি, জাথালিয়া, গোবিন্দাপুর, চন্দ্রা, মৌচাক, বাড়ইপাড়া, কাশিমপুর, সাভার নামের ১০ বিট অফিস।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী চক্র সন্ধ্যা ঘনালেই বনে ঢুকে রাতভর গজারিসহ নানা প্রজাতির গাছ কাটে। প্রমাণ ঢাকতে অনেক সময় গাছ কাটার পর গোড়া তুলে ফেলা হয় কিংবা পুড়িয়ে ফেলা হয়।কখনো অন্য জেলার সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে গাছ কেটে এনে ট্রাকে ভরে উল্লিখিত সংরক্ষিত বনাঞ্চলে রেখে দেওয়া হচ্ছে। সুযোগ বুঝে কালিয়াকৈর-ফুলবাড়িয়া ও মৌচাক-ফুলবাড়িয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে পাচার করা হয় এসব গাছ। এর মধ্যে মৌচাক-ফুলবাড়িয়া সড়ক দিয়ে বেশি পাচার হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।এখান থেকে সুবিধা নেওয়ার জন্য কালিয়াকৈর রেঞ্জের রঘুনাথপুর বিটের বন কর্মকর্তারা তাঁদের কার্যালয়ের ১০ গজ দূরে মৌচাক-ফুলবাড়িয়া সড়কের পাশে একটি ছাপরা ঘর দিয়েছেন। সেখানে একটি তল্লাশিচৌকি বসিয়ে ‘সোনাতলা ক্যাম্প’ নামের সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। স্থানীয় লোকজন এটাকে ‘চেকপোস্ট’ নামে চেনেন।

কালিয়াকৈর রেঞ্জের কর্মকর্তা মোতালেব হোসেন বলেন, কালিয়াকৈরে বন বিভাগের একটি চেকপোস্ট আছে। সেটি চন্দ্রা এলাকায়। আর কোনো চেকপোস্ট নেই। হয়তো পাহারা দেওয়ার জন্য ওই ছাপরা তোলা হয়েছে। তবে গাছ পাচারের বিষয়টি তাঁর জানা নেই।

ব্যবসায়ী সোলাইমান হোসেন ও ট্রাকচালক নুর ইসলাম বলেন, ওই ক্যাম্পে বসে বন প্রহরীরা সারা দিন লাকড়িসহ বিভিন্ন কাঠ বোঝাই ট্রাক, পিকআপ-ভ্যান, টেম্পো, নছিমন-করিমন ও রিকশা-ভ্যান থেকে ৫০-১০০ টাকা করে নিচ্ছেন। এমনকি ক্যাম্পে কেউ না থাকলেও গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখে অফিসে গিয়ে টাকা দিতে হচ্ছে। এই সড়ক দিয়ে প্রায় প্রতি রাতেই গজারিগাছ পাচার হচ্ছে। অফিসে জানালেও লাভ হচ্ছে না। রাতভর গজারিসহ বিভিন্ন চোরাই কাঠভর্তি ট্রাক আসে, তাঁরা সংকেত দিয়ে থামান, টাকা নিয়ে ছেড়েও দেন। টাকা না দিলে মালসহ ট্রাক জব্দ এবং মামলাও করা হয়।

এলাকাবাসী বলেন, রঘুনাথপুর বিট অফিসের অধীনে বনের জমিতে টাকা না দিয়ে স্থাপনা নির্মাণ করা হলে সেটি ভেঙে দেওয়া হয়, মামলাও করা হয়। তবে টাকা দিলেই অবৈধ স্থাপনা বৈধ হয়ে যায়। ফলে উজাড় হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। প্রতিনিয়ত মানুষের অত্যাচারে বন্য প্রাণীরা লোকালয়ে চলে যাচ্ছে। এতে বনে-পাহাড়ে বিপর্যয় ঘটছে। বন বিভাগ না চাইলে কখনোই গাছ পাচার বন্ধ করা সম্ভব নয়।

রঘুনাথপুর বিটের কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন বলেন, ‘এসব অভিযোগ মিথ্যা।’

সোনাতলা এলাকার দিনমজুর কাজল মিয়া ও আবদুল খালেক বলেন, ‘বাড়িতে ঘর নেই, তালপাতার ছাউনির একটি ঘর করেছিলাম। টাকা দিতে পারিনি বলে ঘর ভেঙে দিয়েছে। ঘর তোলার দায়ে গাছ কাটার মামলা দেওয়া হয়েছে। এখন ওই মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট লিংকঃ