গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) ইউনিট গঠন আইনের খসড়া প্রস্তাবটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কিছু সংশোধনীর পর প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী জুলাই থেকে নতুন এই মট্রোপলিটন পুলিশ জিএমপি’র কার্যক্রম শুরু করার জন্য প্রস্তুতি চলছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বাসস এই তথ্য জানিয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও গাজীপুর জেলার সাবেক জেলা প্রশাসক নূরুল ইসলাম বাসসকে জানান, এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের (সম্মতি) অপেক্ষায় রয়েছে। ইতোমধ্যে এই নতুন পুলিশ ইউনিটের সংশোধন করে চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং আগামী সংসদ অধিবেশনে এটি আইনি রূপ দেওয়ার জন্য উত্থাপন করা হতে পারে।
তিনি বলেন, গত ৭ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভায় জিএমপি’র প্রস্তাবটি অনুমোদনের পর তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। কমিটি ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে বৈঠক করে জিএমপি গঠনের প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে।
জিএমপিতে বর্তমানে থাকা তিনটি থানার অংশ নিয়ে মোট ১০টি থানা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বর্তমানে গাজীপুর জেলায় এসপিসহ বিভিন্ন পদ মর্যাদার ৩২৬ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য রয়েছেন। সেখানে মেট্রোপলিটনের প্রধান ডিআইজিসহ ৮ হাজার ২২৬ পদের প্রস্তাব করা হয়েছে। গাড়ি চাওয়া হয়েছে ১ হাজার ২১৭টি। এতে বছরে খরচ হবে ১৮৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। জিএমপির নতুন থানাগুলোর নাম হবে সালনা থানা, জয়দেবপুর থানা, চৌরাস্তা থানা, কোনাবাড়ী, মৌচাক, কাশিমপুর, বোর্ডবাজার, মীরেরবাজার, টঙ্গী পূর্ব থানা ও টঙ্গী পশ্চিম থানা।
আইন মন্ত্রণালয় থেকে ভেটিং শেষে সেটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে অনুমোদন হলেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে যাত্রা শুরু করবে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ইউনিট।
দেশে বর্তমানে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনায় মেট্রোপলিটন পুলিশ ইউনিট রয়েছে। অনুমোদন পেলে গাজীপুর সপ্তম মেট্রোপলিটন হিসেবে যাত্রা শুরু করবে।
গত বছর ২২ আগস্ট পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। প্রস্তাবে গাজীপুর ও টঙ্গী পৌরসভা এলাকার ৩২৯ দশমিক ৯০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি গঠিত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন যাত্রা করে।
গাজীপুর শহর এলাকায় অসংখ্য গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিসহ বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বর্তমানে বিস্তৃত গাজীপুর শহরের জনসংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ। গাজীপুর শহর এলাকায় একটি সমরাস্ত্র কারখানা, একটি সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন (টাকশাল), বাংলাদেশ কৃষি ও ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট, টেলিযোগাযোগ স্টাফ কলেজ, কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার, জেলা কারাগার, টেলিফোন শিল্প সংস্থা, দুটি রেলওয়ে জংশন, তিনটি রেলওয়ে স্টেশন, একটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও কয়েকটি হাসপাতাল, ১০/১২টি বাস স্টেশন, বিভিন্ন ব্যাংকসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এছাড়া জাতীয়, উন্মুক্ত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামিক, মাদ্রাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট, দুটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, একটি সরকারি মাহিলা কলেজ, বহু সরকারি ও বেসরকারি কলেজ, মাধ্যমিক, প্রাইমারি স্কুল, কিন্ডারগার্টেনসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়, মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত বিশ্ব ইজতেমা গাজীপুর সিটি কর্পোরেূশন এলাকার টঙ্গীতে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এতে লাখ লাখ মুসল্লি অংশ নেন।
গাজীপুর মেট্রোপলিটনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৮ হাজার ২২৬টি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬৫টি ক্যাডার পদ। এর মধ্যে ডিআইজি পদবির একজন দায়িত্ব পালন করবেন কমিশনার হিসেবে। তিনজন অতিরিক্ত ডিআইজি, এসপি পদ মর্যাদার ২১ জন ডিসি (ডেপুটি পুলিশ কমিশনার), এডিসি ৪৯ জন ও এএসপি ১৯১ জনের পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন হওয়ার পরও গাজীপুর জেলা পুলিশ বিদ্যমান থাকবে। মেট্রোপলিটন পুলিশ এলাকা হলে বর্তমানে জয়দেবপুর, টঙ্গী থানা ও জয়দেবপুরের টিওপি ও মৌচাক পুলিশ ফাড়ির জনবল মেট্রোপলিটন পুলিশ ইউনিটের সঙ্গে সমন্বয় করা হতে পারে বলেও জানা গেছে।